বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল নয়। বিএনপির একজন জীবিত থাকতেও তাদেরকে মাইনাস করে ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না। শুক্রবার (১৮ জুলাই) পল্টনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে মৌন মিছিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি।

এর আগে, বেলা তিনটার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। মিছিলগুলো পল্টন হয়ে মালিবাগে আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, শহিদদের কেউ বেঁচে থাকলে আজ লজ্জা পেত। তারা যে কারণে শহীদ হয়েছেন আজ তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাদেরকে বিক্রি করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে একটি দল। একজন পীর আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বললেও আজ তিনি জামায়াতের কোলে উঠে বসেছেন। জামায়াত একসময় বিএনপির মাধ্যমে মন্ত্রী হলেও আজ বাস্তবতা ভিন্ন।

তিনি বলেন, আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ চাই, যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।অনেকে আজ বিএনপিকে আওয়ামী লীগের কাতারে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করবে না। তবে বাটে পড়লে কিছু করার নাই। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল নয়। বিএনপির একজন জীবিত থাকতেও তাদেরকে মাইনাস করে ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না।

বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে সরকার এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারকে বলি, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করবেন না। নির্বাচন না দিলে ভাববো, আপনারা দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার। শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস লরেন ড্রেয়ারকে বলেন, বর্ষাকালে চারপাশে সবুজ আর পানির সমারোহ দেখা গেলেও বন্যা ও জলাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ প্রয়োজন। বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের দূরবর্তী এলাকাগুলোর সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই অঞ্চলে স্কুল, শিক্ষক এবং চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তবে সরকার ১০০টি স্কুলে অনলাইন শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে।

স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার বলেন, আমরা বিশ্বের ১৫০টি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করি। তবে এত দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কোথাও দেখিনি। স্পেসএক্স অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দূরবর্তী এলাকার মানুষ অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এমন ব্যবস্থা চালু করতে চাই। রোগীদের চিকিৎসা ইতিহাস ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, যা পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। গর্ভাবস্থার সময় মহিলাদের প্রায়ই চিকিৎসকের কাছে যেতে পুরুষের সহায়তা দরকার হয়। কিন্তু ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে তারা ঘরে বসেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবেন।

এ সময় লরেন ড্রেয়ার বলেন, জনসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আপনার (ড. ইউনূস) উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। দুর্নীতি বন্ধ করতে সেবা বিকেন্দ্রীকরণ ও শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট কনসালটেন্ট রিচার্ড গ্রিফিথস, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ আহমাদ তৈয়্যব, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় জারি করা কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তাতে বলা হয়, জেলায় আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১১টা পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত থাকবে। দুপুর ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। এরপর দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আবারও কারফিউ চলবে।

গতকাল বুধবার সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জের পৌরপার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। এরপর জেলাটিতে গতকাল রাত ৮টা হতে আজ সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এবার চলমান কারফিউর সময় বাড়ানো হলো।

ফেব্রুয়ারিতে যেন নির্বাচন না হয়, সেজন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুযোগ সৃষ্টি হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। গণতন্ত্রের যেন উত্তরণ না ঘটে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত জুলাই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের স্মরণে স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।

তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বিএনপির মতো এত ত্যাগ কেউ স্বীকার করেছে কী না তা জানা নেই। ২০ হাজার নেতাকর্মীকে বিচার বর্হিভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতকিছুর পরও বিএনপি মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। একবারের জন্যও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই থামায়নি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে বেঁচে থাকে। এখন যারা জুলাইয়ের কৃতিত্ব নিয়ে কথা বলছেন, এককভাবে দাবি করছেন, আসলে এই আন্দোলনের কৃতিত্ব জনগণের। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আজকে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যেন বিফলে না যায়। সুযোগ সৃষ্টি হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের যেন উত্তরণ না ঘটে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় বিএনপি নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। তারেক রহমানের ভয়ে তারা এসব করছে। সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। এরা ফাঁদ পাতা হচ্ছে, কিন্তু আমরা তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবো না। গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ বাঁধাগ্রস্ত করতেই এমনটা অরা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। মূলত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যেন না হয়, সেই জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি এ ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকার বিভাগীয় তদন্ত ও দলটির পদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে বাংলামোটরে দলটির কার্যালয়ে এ দাবি জানান নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব নিজামউদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বশীলতার অভাব ছিল। হামলার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার উদাসীন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও এর দায় এড়াতে পারেন না। এই উদাসীনতা জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান তিনি।

নেতারা বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সমন্বয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলতে থাকবে বলেও জানান নেতারা।

২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় রুজুকৃত মামলার মধ্যে ১২টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি হত্যা এবং অন্যান্য ধারায় মামলা ৯টি।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক বার্তায় এ তথ্য জানায় পুলিশ সদর দফতর।

বার্তায় জানানো হয়, চার্জশিট হওয়া তিনটি হত্যা মামলার সবগুলোই শেরপুর জেলার। অন্যান্য ধারার ৯টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ১টি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ১টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩টি, সিরাজগঞ্জ জেলার ২টি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্তাধীন ২টি মামলা রয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকালে দায়েরকৃত মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলা তদারকি করছেন। রুজুকৃত সব মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলেও জানানো হয়। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল কর্মসংস্থানের অভাব। এখনও সেই সমস্যার বড় সমাধান হয়নি। রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে ফেলা কঠিন, এমন মন্তব্য করেছেন শ্রম, কর্মসংস্থান ও যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও ইউএনডিপির কর্মশালায় যোগ দেন তিনি।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, বেকারত্ব দূর করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বেকারত্ব দূর করতে কাজ করছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

এতে জানানো হয়, স্টার্টআপের জন্য ১০০ কোটি টাকার নতুন তহবিল গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে আরও ৩ কোটি ডলার। এটি ব্যবহার করা গেলে ব্যবসার অনেক ভালো আইডিয়া সামনে আসবে বলেও মনে করে বিডা।

বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, এফডিআই টানতে বরাবরই বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ছোট উদ্যোক্তারা সামনে আসতে পারেনি। সে পরিস্থিতি বদলাতে সরকারের সব দফতরের মাঝে সমন্বয় আনার চেষ্টা চলছে।

গোপালগঞ্জে নেতাদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একসাথে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে দলটি। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় খুলন প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্ম সূচির ঘোষণা দেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ ইসলাম বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির ওপর হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বহুদিন পরিকল্পনা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্টদের একটি আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে জেলাটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ সমাবেশ করতে পারবে না এমন মিথ ভেঙে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে পথসভা হবে। পূর্বনির্ধারিত সবগুলো জেলায় পথসভা চলবে। তবে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে স্থগিত হওয়া পথসভার সময় পরে জানানো হবে। এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, অন্যান্য জেলার মতো গোপালগঞ্জেও আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা আরও আগে কঠোর হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারত। প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তা তদন্ত করে দেখতে হবে। হতাহতদের প্রসঙ্গে নাহিস ইসলাম বলেন, গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশে শেষে ফেরার পথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছে। জেলার চৌরঙ্গী মোড়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুই পাশ থেকে এসে হামলা চালায়, ইট-পাটকেল ছুড়েছে।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে হামলাকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। পুলিশও হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। বাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তেও দেখা গেছে।

এদিকে, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছে হামলাকারীরা। তাতে বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়েছেন এনসিপির নেতারা।

এর মধ্যে চৌরঙ্গী মোড় থেকে এনসিপির গাড়ি বহরের কয়েকটি যানবাহন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দিকে চলে গিয়েছে। সেসব গাড়িবহরে কারা রয়েছেন, তা জানা যায়নি। তারাও হামলার শিকার হতে পারেন বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইট থেকে নিবন্ধন স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে ইসির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নামের পাশে প্রতীক হিসেবে ‘নৌকা’ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ‘নৌকা’ প্রতীকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ইসির ওয়েবসাইট

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ‘নৌকা’ প্রতীককে পুনরায় শিডিউলভুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আরও পড়ুন: ‘নৌকা’ মার্কাটাকে কোন বিবেচনায় আবার শিডিউলভুক্ত করতে পাঠালেন: আসিফ

উল্লেখ্য, গতবছরের ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পরবর্তীতে, গত ১২ মে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে।

এর আগে, গত রোববার (১৩ জুলাই) নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হলেও নির্বাচনী প্রতীকের তফসিলে নৌকা প্রতীক আপাতত থাকবে। কারণ, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের জন্যই আমরা একটা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে থাকি। এই প্রতীকগুলো ইসির সংরক্ষিত। এখন কোনো দলকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলে প্রতীক বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, মধুমতির কোল ঘেঁষা গোপালগঞ্জ সারা বাংলাদেশের। যেভাবে জেলাগুলোকে পূর্বে দলীয়করণ করা হয়েছে—বগুড়া, কুমিল্লা। যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে—সেই সংস্কৃতিতে আমরা আর ফিরতে চাই না।

আজ বুধবার ( ১৬ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

তাসনিম জারা বলেন, অনেকে আমাদেরকে ‘৭১- বিরোধী’ বলে দেখাতে চান। কিন্তু ‘৭১ আমাদের, ‘২৪ আমাদের। ‘৪৭, ‘৭১, ‘২৪—এই জনপদের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।

তাসনিম জারার ফেসবুক পোস্ট

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার আর বাংলাদেশকে কিনে নিতে পারবে না। কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে বাংলাদেশ বিক্রি হবে না। বাংলাদেশ হবে সবার। যারা দেশের সংস্কারে বাধা দেবেন, জনগণ তাদের মনে রাখবে।

দেশ গড়তে এনসিপির জুলাই কর্মসূচিতে কোনো জেলা বাদ দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের পদযাত্রা গোপালগঞ্জকে বাদ দিয়ে নয়। এখানকার সন্তানেরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সে জন্যই আমাদের লড়াই। গোপালগঞ্জকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। পথটা দীর্ঘ। চ্যালেঞ্জ অনেক। কিন্তু মানুষ যখন জাগে, ইতিহাস বদলায়।

আদালতের নির্দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার শতাংশ জমি, গাজী টায়ারের কারখানা ও আরও বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে জমি দখল, কমিশন গ্রহণ, জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, হুন্ডি এবং আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েসের ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তার ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে— রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার ৬৯টি দলিলের সর্বমোট ৪৮৮০ শতাংশ জমি। এসবের দলিল মূল্য ১৬ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ সব জমিতে তার গাজী টায়ার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গাজী ডোর, গাজী নেটওয়ার্ক, গাজী টায়ার, গাজী ট্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এর আগে, গত ৮ জুলাই সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন।