এবার আর দিনের ভোট রাতে হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কমিশন। এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
সোমবার (৫ মে) সকালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সিইসি আশ্বস্ত করেন, কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াবে না কমিশন। যেকোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নয় বরং কমিশনের সকল সদস্য মিলেই নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শপথ পড়ানোর দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক। এতে আরও অংশ নেন ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
পিছিয়ে পড়া জেলা পার্বত্য রাঙামাটিতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হবিব উল্লাহ এক অনন্য সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যোগাযোগের দুর্গমতা এবং শিক্ষক, অবকাঠামোসহ নানামুখি সমস্যার কারণে রাঙামাটি জেলার বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মান আবহমান কাল থেকেই প্রশ্ন বিদ্ধ। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষায় অন্য দুই পার্বত্য জেলার সাথে পার্বত্য রাঙামাটির ফলাফলও জেলাবাসীকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। এমনকি এই তিন জেলার কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল সারাদেশের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয় পর্যায়ে বিদ্যমান সমস্যাগুলো এতটাই জটিল যে, সহসা এসব সমস্যা সমাধান করে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিবেশ উন্নত করা এক দূরহ কাজ। সে কারণে সমস্যাগুলো সাথে নিয়েই স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আপাতত শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু অতিরিক্ত পাঠ্যাভ্যাস বা সামষ্টিক পাঠের প্রচলন শুরু করে তাদের শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৃজনশীল এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে “শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় মাসিক সভা আয়োজনের কার্যক্রম চলছে। জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রচলিত “অভিভাবক সমাবেশের” সরকারী পদ্ধতিকে কিছুটা পরিবর্তন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চলতি মে মাস হতেই চালু করা হচ্ছে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক: ত্রিপক্ষীয় মাসিক সভা। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে ১০ম শ্রেণীগুলো নিয়েই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
জেলাপ্রশাসকের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে অভিভাবক এবং শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহের জন্ম দিয়েছে। বিদ্যালয় পর্যায়ে সামষ্টিক পাঠের ধারণা নতুন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দিত, তেমনি এই পদ্ধতিতে তুলণামুলক মেধাবীরা যেমন তাদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন, কম মেধাবীরা অন্যাদের চর্চা দেখে নিজেকে সুধরে নেওয়ার এবং পাঠ আত্মস্থ করার সুযোগ পাবেন।
জেলাপ্রশাসন সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ‘মাসিক ত্রিপক্ষীয় সভা’ এবং ‘গ্রুপ স্টাডি’র বিভিন্ন দিক নিয়ে এপ্রিল মাসজুড়ে জেলার শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষা কর্মকর্তা, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় করা হয়। সকলের মতামতের ভিত্তিতে জেলা সদর এবং উপজেলাসমূহের পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু স্কুলে এটা চালু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এবিষয়ে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় ও অনলাইন ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয়গুলোতে এখন থেকে প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রেনীভিত্তিক ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করা হবে। শ্রেণিশিক্ষকের সভাপতিতে ওই সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক। সংশ্লিষ্ট শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং বিষয় শিক্ষকগণ এ সভায় উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, এতে সুবিধাভুগী বা উপস্থিতির সংখ্যা তুলনামুলক সিমীত পর্যায়ে থাকায় সকলের মতামত শান্তভাবে শোনার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পর্যালোচনার ভিত্তিতে করনীয় নির্ধারণ সহজ হবে। সাধারণত স্কুলে যে অভিভাবক মিটিংগুলো অনুষ্ঠিত হয় তাতে সকল শ্রেণীর অভিভাবকরা একসাথে উপস্থিত থাকেন, তাতে কয়েকজন অভিভাবক তাদের মতামত বা শিক্ষার্থীর সমস্যার কথা বলতে পারেন। অনেক অভিভাবক তাদের সমস্যার কথা বলারও সুযোগ পাননা।
এই পদ্ধতিতে যে সম্ভাব্য যে সুবিধাগুলো অর্জন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : এতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে এবং সমাধান সহজ হবে। শ্রেণি শিক্ষক কেবল একটি শ্রেণি নিয়ন্ত্রণ করায় তাঁর শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারবেন। সভায় অভিভাবকদের কমিটি বা পদ-পদবী না থাকায় সবাই সমভাবে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারবেন।
অভিভাবকগণ নিজ সন্তানের বিষয়ে যে কোনো মতামত লিখিত বা মৌখিকভাবে পেশ করতে পারেন। শ্রেণি শিক্ষক মতামত ও গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ রেজিস্টারভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির ম্যাসেঞ্জার/ হোয়াটসঅ্যাপ ফোরামে প্রচার করবেন। এতে সমস্যা ও সমাধানের পথ সকলের গোচরে থাকবে এবং পরবর্তী মাসে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা সহজ হবে।
সকল পর্যায়ের অভিভাবকরা এই পদ্ধতি চালুর কারণে আগামী দিনে তাদের সন্তানদের জন্য এক নতুন দিনের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। সকলে এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেছেন।
আসন্ন ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, পশু আনা নেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (৪ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র মানুষ, যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
পশুর চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট আছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে কোনো সিন্ডিকেট বা অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়।
অপরদিকে, কোরবানির পশু পরিবহণ ও হাটে বিক্রির সময় যাতে পশুর প্রতি কোন নির্দয় আচরণ করা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ইটিপির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।কমিটিতে আরও থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
প্রায় ১৭ বছর পর শাশুড়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন ডা. জোবাইদা রহমান। তার এই ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। তিনি কি বিএনপির নেতৃত্বে আসবেন? নাকি ফিরবেন পুরনো চিকিৎসা পেশায়? বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতারা মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।
তারেক রহমানের আগে জোবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে অনেকের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। এটি কি নিছক শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গী হওয়া? নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর পাশে থাকা? তবে বহুবছর ধরে তার বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার যে গুঞ্জণ ছিল, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে জোবাইদা রহমানের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতি আসবেন কি না তা আমার জানা নেই। তিনি যদি রাজনীতি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানাবো।
ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হলে, তা কি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে?
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, জোবাইদা রহমান দীর্ঘদিন রাজনৈতিক পরিবারের সাথে ছিলেন। ফলে তার রাজনৈতিক পরিপক্বতা এসেছে ও রাজনীতি শিখেছেন। ফলে রাজনীতি করা তার জন্য কঠিন কিছু হবে না।
তিনি আরও বলেন, জোবাইদা রহমান রাজনীতি আসলে বিএনপির জন্য ভালো হবে। কেন্দ্রীয় নেতার অভাবে এতোদিন বিএনপির মধ্যে একটা নৈতিক শূণ্যতা ছিল, সেটি তিনি অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। এতে দলটির নৈতিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা বাড়বে।
১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন জোবাইদা রহমান। জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ হলেও জোবাইদা চিকিৎসা পেশায় ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছেন। রাজনীতিতে না জড়ালেও তারেক রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্নীতি মামলার শিকার হয়েছেন। একপর্যায়ে অসুস্থ স্বামীর পাশে থাকতে লন্ডনে চলে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে কর্মস্হলে না থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে।
২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচারিক আদালতের সেই সাজা স্থগিত হয়েছে।